কোয়ান্টাম কম্পিউটারের উত্থান, ভালো-মন্দের এপিঠ-ওপিঠ
সাধারণ মানুষের কাছে কম্পিউটার মানে মনিটর, কিবোর্ড, মাউস ও সিপিউর সমন্বয়। আর টেক বিশেষজ্ঞরা কম্পিউটারকে দেখেন হার্ডওয়্যারের কলকব্জা ও সফটওয়্যারের কোডিংয়ের দৃষ্টিতে; সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একেবারেই ভিন্ন কিছু।
ডিজিটাল কম্পিউটার যেখানে ট্রানজিস্টরের সাহায্যে একটি বস্তুর বাইনারি হিসাব সমাধান করে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেখানে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির মাধ্যমে একসঙ্গে কয়েক লাখ কিউবিটের পরিধি তৈরি করে সামগ্রিক ফলাফল নিয়ে কাজ করে। ছবি: সংগৃহীত
মহির মারুফ
৮ মিনিটে পড়ুন
কম্পিউটারের যুগকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। কম্পিউটিং অর্থাৎ গণনার বুদ্ধিবৃত্তিক যুগের সূচনা হাজার বছর আগে। এরপর অ্যানালগ কম্পিউটারের পূর্ণাঙ্গ আবির্ভাব, ডিজিটাল কম্পিউটারের আবিষ্কার আর বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের যে সম্ভাব্য বিপ্লব হতে যাচ্ছে তা বিশ্বের প্রযুক্তিখাতে আমূল পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা।
কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী ও নিউ ইয়র্কের সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশিও কাকু প্রযুক্তিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিগ থিঙ্ককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কম্পিউটারের দুনিয়া শুরু হয়েছে অ্যানালগ পদ্ধতির হাত ধরে। কয়েক হাজার বছর আগেও মানুষ গণনার জন্য গাছের পাতা, পাথরের টুকরা কিংবা প্রাণীর হাড় ব্যবহার করতো। গণনার এ অ্যানালগ পদ্ধতিও এক ধরনের কম্পিউটিং মাধ্যম। এরপর গণনার জন্য আরেক ধাপ এগিয়ে অ্যাবাকাস কিংবা জাহাজে ব্যবহৃত চাঁদ-সূর্যের গতিবিধি নির্ণায়ক যন্ত্র আবিষ্কার; যা সবই অ্যানালগ কম্পিউটারের একেকটি ধরন।
অ্যানালগ কম্পিউটার পূর্ণতা পায় চার্লস ব্যাবেজের হাত ধরে। ব্যাবেজের কম্পিউটারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দশমিকের হিসাব কষা সহজ হয়ে যায়। বর্তমান সময়ে এসে মূল্যস্ফীতির হিসাব কষা কিংবা সুদের হার বের করা- এ সবই ব্যাবেজের ডিজিটাল কম্পিউটারের ফসল। এ কম্পিউটারের হাত ধরে বিশ্বের চেহারা পাল্টে যায়, বিশাল পরিবর্তন আসে ব্যাংকিং ও বাণিজ্য খাতে।
ডিজিটাল কম্পিউটারের জন্ম নিয়ে মিশিও কাকু বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির গোপন সংকেতের মর্মার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্য ব্রিটিশ নাগরিক অ্যালান টুরিংয়ের হাত ধরে জন্ম নেয় ডিজিটাল কম্পিউটার, যা কিনা নানা ধরনের কোডের মর্মার্থ উদ্ধার করতে সক্ষম। অ্যালান টুরিংয়ের আবিষ্কৃত টুরিং মেশিনকে বলা হয় ডিজিটাল কম্পিউটারের মেরুদণ্ড, যার ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো বীজগাণিতিক হিসাব-নিকাশের ওপরে।
অ্যালান টুরিং সবচেয়ে বড় বিপ্লব ঘটান কাজের সময় কমিয়ে আনার মাধ্যমে। ডিজিটাল কম্পিউটারের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলো বিদ্যুতের গতিতে কাজ করতে সক্ষম। এছাড়া টুরিংয়ের আরেকটি সাফল্য ট্রানজিস্টরের আকার ছোট করে নিয়ে আসা। টুরিং বিশ্বাস করতেন, একটি ট্রানজিস্টর চাইলে পরমাণুর মতো ক্ষুদ্র হতে পারে, যা আজকের দিনে এসে বাস্তবে পরিণত হয়েছে। ট্রানজিস্টরের এই ক্ষুদ্র কণিকার মাধ্যমেই আজকের চিপ প্রযুক্তি পুরো ডিজিটাল কম্পিউটিং সামাল দিচ্ছে বলে জানান এ পদার্থবিজ্ঞানী।
যেখানে ডিজিটাল কম্পিউটারের হিসাবে গাণিতিক ফলাফল সরলরৈখিক, সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার যেকোনো সমস্যার বহুমাত্রিক সমাধান নিয়ে কাজ করে।
১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান যুগকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রাথমিক যুগ বলা হয়। ডিজিটাল কম্পিউটারের বীজগাণিতিক হিসাব যেখানে শূন্য এবং একের বাইনারি নম্বরের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের লক্ষ্য কোয়ান্টাম দুনিয়ার তাবৎ অনু-পরমাণুর গাণিতিক হিসাবের ঢেউ নিয়ে কাজ করা, যা আরও বেশি বাস্তবিক এবং একইসঙ্গে বহুমাত্রিক।
শ্রোডিঞ্জারের বাক্সবন্দি বিড়ালের রূপক টেনে মিশিও কাকু বলেন, একটি বাক্সে বিড়াল রাখা হলো, যেখান থেকে সেটির অবস্থান বোঝা সম্ভব না। হতে পারে বিড়ালটি মৃত, হতে পারে জীবিত। বাক্সের ভেতর বিড়াল খেলাধুলায় মত্ত থাকতে পারে, আবার ঘুমাতেও পারে। একটি প্যারালাল দুনিয়ায় যা যা হতে পারে তাই কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার প্রধান অংশ এবং এটির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার, যা কিনা একটি ঢেউয়ের প্রতিটি খাদ ও উত্থানের গাণিতিক ব্যাখ্যা দিতে সম্ভব।
সহজ ভাষায় বললে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার একটি হিসাবের প্রতিটি সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে সক্ষম। যেখানে ডিজিটাল কম্পিউটারের হিসাবে গাণিতিক ফলাফল সরলরৈখিক, সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার যেকোনো সমস্যার বহুমাত্রিক সমাধান নিয়ে কাজ করে।
ডিজিটাল কম্পিউটারের কাজের গতি ও পরিধি যেখানে বাইনারি নম্বরের বিট দিয়ে হিসাব করা হয়, কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সেই হিসাব হয় কিউবিটের মাধ্যমে। ডিজিটাল কম্পিউটার যেখানে ট্রানজিস্টরের সাহায্যে একটি বস্তুর বাইনারি হিসাব সমাধান করে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেখানে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির মাধ্যমে একসঙ্গে কয়েক লাখ কিউবিটের পরিধি তৈরি করে সামগ্রিক ফলাফল নিয়ে কাজ করে।
বর্তমান দুনিয়ায় যত ডিজিটাল কম্পিউটার আছে, একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্মিলিতভাবে এসব ডিজিটাল কম্পিউটারের চেয়ে শক্তিশালী হবে। মিশিও কাকুর বক্তব্য অনুযায়ী, এখন অবধি এত শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা না গেলেও শিগগিরই এমন কম্পিউটার তৈরি হবে যা সারা বিশ্বে কোয়ান্টাম বিপ্লব ঘটাবে।
তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ। পারমাণু পরিমাণ সমস্যা সমাধানে কাজ করা এই কম্পিউটার সাধারণ তাপমাত্রায় পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভুল সমাধান দিতে পারে না। সাধারণ তাপমাত্রায় পরমাণুর মধ্যে সমন্বয় ও প্রকৃত তরঙ্গ না থাকার ফলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হয়, যেখানে ফলাফল বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো আশঙ্কা নেই।
মানুষের সাধারণ জীবনে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রভাব নিয়ে মিশিও কাকু বলেন, দিনকে দিন জমির উর্বরতা কমে আসছে, এতে করে বিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কোয়ান্টাম প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মাটির নাইট্রোজন দিয়ে সার তৈরির নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করা সম্ভব। একইভাবে ক্যানসার, পারকিনসন ও আলঝাইমারের মতো মারাত্মক রোগের প্রতিশেধকও কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে আবিষ্কার করা সম্ভব। এটি এমন একটি প্রযুক্তি, যা বিশ্বের যেকোনো সমস্যার সরলরৈখিক সমাধান না দিয়ে, বহুমাত্রিক সমাধানের পথ খুলে দেবে।
একইভাবে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজ, অন্য গ্রহে বসবাসযোগ্যতা নিরূপণ, কৃষ্ণগহ্বরের রহস্য উদ্ঘাটন কিংবা সুপারনোভার শক্তিমত্তা পরিমাপে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে। এতে করে এতদিন যা কিছু মানুষের কাছে অজানা ছিল তার পর্দা সরে যাবে আর মানুষ হবে সবজান্তা। আগামী দুনিয়ায় মানুষের কাছে রহস্য বলে কিছুই থাকবে না বলে জানান মিশিও কাকু।
অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন কোয়ান্টাম কম্পিউটার মানুষকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেবে। তবে এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে মিশিও কাকু বলেন, একটি উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণে বা একটি ফুল ফুটতে পৃথিবীর সাধারণ তাপমাত্রায় যে কোয়ান্টাম পদ্ধতি ব্যবহার হয়, যেভাবে পরমাণুর হিসাব এবং সমন্বয় সঠিক থাকে, এমন নির্ভুল হিসাব এখন পর্যন্ত কোয়ান্টাম কম্পিউটারও করতে পারেনি।
প্রকৃতি যেখানে নিজে আপনমনে দুনিয়ার সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম হিসাব কষছে, সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এত শক্তিশালী হয়েও শতভাগ নির্ভুল এমন দাবি করা যায় না বলে জানান মিশিও কাকু।
আলোর নিচে অন্ধকারের মতো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক হচ্ছে, আগামী বিশ্বে গোপনীয়তা রক্ষা করা। যেহেতু কোয়ান্টাম কম্পিউটার বহুমাত্রিক উপায়ে সব ধরনের কোডকে ডিকোড করতে সক্ষম, তাই এটি যেকোনো গোপনীয় কোড ডিকোড করে তথ্য ফাঁস করে দিতে পারবে। এই তথ্য ফাঁসের জালে ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় মাধ্যম- যে কেউ ভুক্তভোগী হতে পারে।
বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের যে সম্ভাব্য বিপ্লব হতে যাচ্ছে তা বিশ্বের প্রযুক্তিখাতে আমূল পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সের খবরে জানা যায়, কানাডার সাইবার নিরাপত্তাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিউডি-ফাইভ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে; যেখানে বলা হয়েছে, কোয়ান্টাম যুগের এ সময়ে এসে দেশটির ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা হুমকির মুখে। ২০২৫ সালের মধ্যে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে যেখানে গোপন তথ্য বলে বিশ্বে আর কিছুই থাকবে না।
কিউডি-ফাইভের ভাইস প্রেসিডেন্ট টিলো কুনজ বলেন, আগামী বিশ্বে ইন্টারনেটে বা ডাটা সেন্টারে যাই থাকুক না কেন, গোপন বলে কিছু থাকবে না। ব্যবসার মডেল, সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা, ওষুধের পেটেন্ট; কিছুই আর ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে সংরক্ষণ করা যাবে না। এমন কোনো কোড থাকবে না, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটার ডিকোড করতে অক্ষম। এরইমধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক ঘোলা হতে শুরু করেছে।
রয়টার্সের খবরে আরও জানা যায়, গত বছর সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালক ক্রিস্টোফার ওয়ারি জানিয়েছেন, চীন বড় ধরনের হ্যাংকিংয়ের পরিকল্পনা করছে। চীন থেকে যেকোনো সময়ে এমন কোনো সাইবার হামলা হতে পারে যা আগে কখনো যুক্তরাষ্ট্র দেখেনি।
একই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে চীন জানিয়েছে, দিনের পর দিন কাঠামোগত পরিকল্পনার ভিত্তিতে সাইবার হামলার মাধ্যমে চীনের রাষ্ট্রীয় তথ্য চুরি করছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত দুই দেশের এ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের প্রাথমিক প্রতিযোগিতার দিকেই ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
টাইম ম্যাগাজিনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইনসাইড কোয়ান্টাম টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা লরেন্স গ্যাসম্যান বলেন, প্রযুক্তিগত দুটি বিপ্লব পাশাপাশি চলছে; একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), আরেকটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও এআই যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করে তাহলে বৈশ্বিক প্রযুক্তিখাতে বড় রকমের বিপ্লব ঘটে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিটিং প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টিনামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ হাজরা বলেন, পারফেক্ট পার্টনার বলতে যা বোঝায়, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও এআই হচ্ছে তাই। জেনারেটিভ এআই ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং মিলেমিশে বিশ্বের বুকে নতুন এক প্রযুক্তির জগৎ খুলে দিতে সক্ষম।
বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে সবচেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস করপোরেশনের (আইবিএম) হাত ধরে। আইবিএমের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে গ্যামবেট্টা জানান, গতবছর প্রতিষ্ঠানটি হেরন নামে একটি কোয়ান্টাম প্রসেসর তৈরি করেছে যেটি ১৩৩টি কিউবিট সামাল দিতে সক্ষম। এরপর ক্যানডোর নামে আরেকটি প্রসেসর প্রস্তুত করা হয়েছে; যেটি ১ হাজার ১২১টি পর্যন্ত কিউবিট তৈরি করতে পারে। যেখানে একটি কিউবিট মানেই কয়েক মাত্রার ফলাফল সেখানে হাজারের উপরে কিউবিট দিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন সমস্যার সমাধান করা যাবে।
আগামী বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র শুধু প্রযুক্তি খাতেই ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিপুল সংখ্যক অর্থ ব্যয় করা হবে এআইকে আরও শক্তিশালী এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করতে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ইনোভেশন অ্যান্ড কম্পিটিশন আইন-২০২১ এর মাধ্যমে কোয়ান্টাম খাতে গবেষণার জন্য দেড় বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা চলছে চীনের। চীন যাতে কোনোভাবেই কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে দেশটি। যেহেতু এআই ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছে তাই এর অংশ হিসেবে চীনের বাজারে নিভিডিয়ার চিপ বিক্রি সীমাবদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হয়, যেখানে ফলাফল বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো আশঙ্কা নেই।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো বিশ্ব মোড়লরা যেভাবে প্রযুক্তি নিয়ে রেষারেষি করছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্থা (ডব্লিউইএফ) আয়োজিত এক প্যানেল ডিসকাশনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যবস্থা হয়ে উঠবে এআই নির্ভর। এমনকি মানুষের থেকে এআই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। আর এই এআইয়ের চালিকাশক্তি যেসব দেশের হাতে থাকবে, তাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে পুরো বিশ্বে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এআইয়ের প্রভাবের বিষয়ে সালমান বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। এখন পর্যন্ত এ খাতের ওপর এআইয়ের কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়লেও আগামীতে বাংলাদেশের পোশাকের বড় ক্রেতা ওয়ালমার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেই পোশাক বানাবে না, তার নিশ্চয়তা কী! এমনটা হলে পোশাক খাতে বড় রকমের ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
শুধু এআই না, কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিশ্বের প্রযুক্তিখাতে বড় রকমের বিপ্লব ঘটাবে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। দুটি দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে প্রযুক্তির এ বিপ্লব বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য আশীর্বাদ হবে, নাকি নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে?
কোয়ান্টাম কম্পিউটার যুগের চরম সীমাকে প্রযুক্তিবিদরা কিউ-ডে হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। কিউ-ডে এর যুগ শুরু হলে গোপনীয়তার যুগের সমাপ্তি ঘটবে বলে মনে করছেন তারা। একদিকে এআই, অন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সব মিলিয়ে কোনটি বাস্তব আর কোনটি পরাবাস্তব; সেটি নির্ণয় করা হবে আগামী বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
0 Comments